নবকুমার :
ইতিহাসের বেদনাবিধুর ও বিভীষিকাময় মাস আগস্ট। এটি বাঙালি জাতির শোকের মাস। আগস্ট মানেই আ.লীগের হারানোর মাস । বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে স্বাধীনতার স্থপতিকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কূচক্রীমহল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একদল চক্রান্তকারী ও উচ্চাভিলাষী ক্ষমতা লোভী হায়েনার দলের নির্মম বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সহ পরিবারে হত্যা করা হয়। জাতির পিতার হত্যার মধ্য দিয়ে একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা বিষাক্ত সাপের মতো ফণা তুলে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে এবং দেশকে মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ ও চেতনা থেকে বিচ্যুত করার দিকে ঠেলে দেয়।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আরও প্রাণ হারান তার প্রিয় সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, সেনা কর্মকর্তা শেখ জামাল, ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল এবং নবপরিণীতা দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল। প্রবাসে থাকায় জীবন রক্ষা পান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
নির্মম সেই হত্যাযজ্ঞে আরও নিহত হন বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, শিশু পৌত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন নিরাপত্তা কমকর্তা-কর্মচারী।
ইতিহাসের নির্মম সেই হত্যাকান্ডের বিচারের পথ বন্ধ করতে ইনডেমনিটি বিলও পাস করা হয় সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে। চলে ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র।
বিদেশে থাকায় সেই কালোরাতে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বাবা নিহত হওয়ার ছয় বছর পর বাংলাদেশে ফিরে এসে দলের হাল ধরেন শেখ হাসিনা। বাবার মতো তাকেও হত্যার ষড়যন্ত্র হলো। কিন্তু থেমে যাননি বঙ্গবন্ধু কন্যা। তারই নেতৃত্বে প্রাণ পেয়েছে গণতন্ত্র। বিচার হয়েছে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের।
বহু সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একুশ বছর পরে
১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় ফিরে এসে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফেরানো শুরু করলেও ঐ কালো অধ্যায় জাতির ইতিহাস থেকে মুছে যেতে পারে না, যেখানে রয়েছে জাতির জন্য শিক্ষার অনেক ঐতিহাসিক উপাদান।
সেই হত্যাকান্ডের বিয়োগান্তক অধ্যায় সূত্রে জাতি আগস্ট মাসজুড়ে গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্টের শহীদদের। ঘৃণা-ধিক্কার জানায় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী চক্রান্তকারী ঘাতকদের।
রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীকের নেতৃত্বে মাস ব্যাপী বঙ্গবন্ধুর ৪৩ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে । বঙ্গবন্ধুর স্মরণে দোয়া ও আলোচনা সভা প্রতিটা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক এমপি।
১ আগস্ট বুধবার চনপাড়া ইউনিয়নে। ২ আগস্ট বৃহষ্পতিবার দাউদপুর ইউনিয়নে। ৩ আগস্ট শুক্রবার কায়েত পাড়া ইউনিয়নে। ৪ আগস্ট শনিবার রূপগঞ্জ ইউনিয়নে । ৫ আগস্ট রবিবার মুড়াপাড়া ইউনিয়নে। ৬ আগস্ট সোমবার ভূলতা ইউনিয়নে। ৭ আগস্ট মঙ্গলবার ভোলাব ইউনিয়নে। ৮ আগস্ট বুধবার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে। দু দিন বিরতি রাখা হয়েছে। ১১ আগস্ট শনিবার তারাব পৌরসভা। ১২ আগস্ট রবিবার কাঞ্চন পৌরসভায়। ১৩ এবং ১৪ আগস্ট আলোচনা সভা আছে তবে চূড়ান্ত হয় নি। ১৫ আগস্ট বুধবার সারা রূপগঞ্জ স্থানীয় সাংসদ গোলাম দস্তগীর গাজীর উদ্যোগে কাঙ্গালি ভোজের আয়োজন করা হয়েছে।
ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসার পর কলঙ্কিত সেই অধ্যাদেশ বাতিল এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করা হয়। নানা কূটকৌশলের জাল ছিন্ন করে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের চূড়ান্ত রায় এবং পরবর্তী সময়ে পাঁচ ঘাতকের ফাঁসি কার্যকর করার মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হয়েছে। তবে পুরো জাতি এখনও প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে বঙ্গবন্ধুর বাকি ছয় পলাতক খুনির ফাঁসি কার্যকর করার জন্য।
সেই পরাজিত শক্তিরা ২০০১ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো হয়েছিল ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলা। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে চালানো ওই গ্রেনেড হামলা থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও ঝরে গিয়েছিল মহিলা আওয়ামী লীগ নেতা আইভি রহমানসহ ২৪টি তাজা প্রাণ।